সংবাদদাতা:
হালচাষ করা খেতের ন্যায় হাঁটু সমান কাদা, থেকে থেকে কুয়ার মতো গর্ত, মিনিট পাঁচেকের পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যায় কুড়ি মিনিটেরও বেশি! এমনই।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একপাশে সারি সারি ধান বোঝাই করা পিক-আপ, অন্য পাশে হাঁটু সমান কাদা পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রাচীনকালে নৌকাঘাট হিসেবে পরিচিত সোনাইমুড়ী পৌরসভার রেল স্টেশন থেকে কলেজ গেইট পর্যন্ত সড়কটি রেলস্টেশন নামে নামকরণ করা হয়। পৌরসভার অন্যান্য সড়কে বড় গাড়ি চলাচল করায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে স্কুল-কলেজে যায়। গত কয়েক বছর ধরে ধান ব্যবসায়ীদের ট্রাক-পিকআপ আসা যাওয়ায় সড়কটি ধূলিময় এবং বৃষ্টি হলে কাদায় ভরে থাকায় শিক্ষার্থীসহ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিকবার অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন এবং সকাল আটটা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ট্রাক-পিকআপ চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিন রাত সমান তালে লোরি ও পিকআপে ধান লোড-আনলোডের মাধ্যমে সড়কটি ধান ব্যবসায়ীরা তাদের দখলে নিয়ে নেয়। সড়কটি যেন বেপরোয়া কয়েকজন রাজার রাজ্য।
সড়কের দুপাশের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানান, ধান ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো যখন তখন পিকআপ ঢুকিয়ে সড়কটি বল্ক করে রাখে। অনবরত ট্রাক-পিকআপ আসা-যাওয়া করায় গ্রীষ্মকালে ধূলিময়, একটু বৃষ্টি হলেই সড়কটি কাদায় ভরে যায় আর বর্ষাকালে হাল চাষ করা জমির মত হয়ে থাকে। এর ফলে সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করতে না পারায় তাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। তারা পৌর মেয়র ও পশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
রিক্সা চালকরা জানান, রেলস্টেশন সড়ক দিয়ে রিক্সা নিয়ে গেলে অনেক সময় ট্রাক আর পিকআপ ড্রাইভারদের গালাগালও শুনতে হয়। নিরবে চলে যাই, মনে হয় পরাধীন রাজ্যে বসবাস করছি।
কয়েকজন প্রবীণ পথিক জানান, পূর্বের নৌকাঘাট অনেক ভালো ছিল। মানুষ তখন সুন্দরভাবে যাতায়াত করতে পারতো। আর এখন ফাঁকা সড়ক হয়েও চলাচল করতে অনেক কষ্ট হয়। হাল চাষের জমি আরো ভালো আছে।
এ বিষয়ে ধান ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, সড়ক হয়েছে গাড়ি চলাচলের জন্য আর গাড়ি চলাচল করলে সড়ক একটু নষ্ট হবেই। তিনি বলেন, ১০ বছর ধরে মেরামত না হওয়ায় সড়কের এমন বেহাল অবস্থা।
পৌরসভার মেয়র মোতাহের হোসেন মানিক জানান, ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ লোডের গাড়ি ঢুকানোর কথা তার চেয়ে তিনগুণ লোডের গাড়ি ঢুকানো হয়। ব্যবসায়ীরা নিয়মিত পৌর ট্যাক্স দিচ্ছে না, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌর টেক্স বকেয়া রয়েছে। তার কারণে বাজারের উন্নয়নমূলক কাজ করা যাচ্ছে না।
ধান ব্যবসায়ীরা খুবই বেপরোয়া, একাধিকবার অভিযান চালানোর মাধ্যমে জরিমানা ও সকাল আটটার পর থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সড়কে কোন ধরনের বড় গাড়ি ঢুকানো যাবে না বলে সতর্ক করা হয়েছে।
সড়কের দু’পাশে সরকারি খাল দখল করে কিছু লোক অবৈধ দোকানপাট তুলতে গিয়ে ড্রেন গুলোও নষ্ট করে ফেলেছে, যার কারণে সড়কের উপর পানি জমে থাকে। আইনশৃংখলা মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনা হবে, সড়কের বেহাল অবস্থা যাদের কারণে সৃষ্ট তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply