ডা. আফরিন সুলতানা
বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। প্রতিদিন ঈঙঠওউ-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এবং মৃত্যের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমাদের দেশের পরিস্থিতিও এর ব্যতিক্রম নয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে এত বিপুল পরিমাণ রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে। এমতাবস্থায় আমাদের উচিত প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং এজন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো বা ওসসঁহরঃু ইড়ড়ংঃ করার দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। তাই আজকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ওসসঁহব ঝুংঃবস করার ১০টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে বলব।
১. খাদ্যাভ্যাস : সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। ফলের রসের পরিবর্তে গোটা ফল চিবিয়ে খেলে ভালো। এতে পুষ্টি সঙ্গে ফাইবারও পাওয়া যাবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন ৮-১০ গ্লাস। ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও মসলা খাবার যতটুকু সম্ভব পরিহার করুন।
২. ভিটামিনস ও মিনারেল : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন সি : প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে টক জাতীয় ফল, যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা, আমড়া, জাম্বুরা ইত্যাদি। এছাড়াও বাজারে ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়, যা ফ্লু উপসর্গে আপনি দিনে ১-২ বার চুষে খেতে পারেন। তবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া ভিটামিন সি এর কার্যকারিতা বেশি।
ভিটামিন ডি : এর প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে সূর্যরশ্মি যা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শরীরের কিছু অংশ উন্মুক্ত করে (যেমন মুখমন্ডল, হাত বা ঘাড় আপনি কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়াও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিমের কুসুম, মাছের তেল, ওমেগাও, গরুর কলিজা, চিজ এগুলো খেতে পারেন।
জিংক : ফ্লু বা সর্দি-কাশি উপসর্গে, জিংকের বেশ উপকারিতা রয়েছে। জিংকসমৃদ্ধ খাবার গুলো হচ্ছে- আদা, রসুন, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ, ইত্যাদি। বাজারে লজেন্স আকারে জিংক সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন ২-৩ ঘন্টা পরপর।
৩. মধু : মধুতে এমন কিছু জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছেন যেমন- হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড যা জঘঅ ঠরৎঁং এর বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই ফ্লু উপসর্গে মধু বেশ উপকারী তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সাবধানে খেতে হবে।
৪. প্রোবায়োটিক্স : যেমন- দই, চিজ ইত্যাদি খাবারে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা রোগী প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৫. মানসিক চাপমুক্ত থাকুন : অতিরিক্ত মানসিক চাপে আমাদের শরীরের ঝুসঢ়ধঃযবঃরপ ধপঃরারঃু বেড়ে যায় এবং কর্টিসল/ঈড়ৎঃরংড়ষ হরমোন নিঃসরণ হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। টিভি, সোশ্যাল মিডিয়াতে যে খবরগুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলছে। সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। মনকে উরাবৎঃ করার জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটান, গান শুনুন, বই পড়ুন, মুভি দেখুন বা নতুন কিছু শিখতে মনোনিবেশ করুন। এছাড়া যোগ ব্যায়াম বা মেডিটেশন একটি খুব ভালো উপায় মনকে শান্ত রাখার।
৬. শরীরচর্চা : শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরচর্চা অপরিহার্য। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন আমরা সবাই ঘরে অবস্থান করছি। প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এবং বাচ্চাদের অন্তর ১ ঘন্টা শরীরচর্চা করা উচিত। ঘরে থেকে আপনি যা করতে পারেন হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং, ইয়োগা, ওয়েট শিফ্টিং, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা শরীর চর্চার উপায় হতে পারে।
৭. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা : বিশেষ করে ধূমপান, যা সরাসরি আপনার শ্বাসতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যেহেতু করোনাভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের রোগ, এতে সংক্রমের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ধূমপান পুরোপুরি বাদ দিন ও জবংঢ়রৎধঃড়ৎু ঊীবৎপরংব করুন। মদ্যপান পুরোপুরি পরিহার করুন।
৮. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা : শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প নেই। খাবার পরিমিত খান ও শরীরিকভাবে সচল থাকুন।
৯. ঘুম : মনে রাখবেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘন্টা করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম আমাদের ওসসঁহব ঝুংঃবস ইড়ড়ংঃ ৩ জবহবি করতে।
১০. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা : আমরা যদি করোনাভাইরাস রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচতে চাই নিজের ও আশপাশের পরিবেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। নির্দিষ্ট সময়ে পরপর হাত সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। দরজার হাতল, সুইচ, লিফ্টের বাটন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখুন ও মাস্ক ব্যবহার করুন। তাই এ সময়ে এসব বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। কারণ প্রতিকার নয় প্রতিরোধ উত্তম।
লেখক : কনসালটেন্ট, হলি ফ্যামেলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
Leave a Reply